সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮

বাংলাবিদ্যা আলোচনা

বাংলাবিদ্যা আলোচনা


 বাংলাবিদ্যা আলোচনা





বিনামূল্যে ফন্ট ডাউনলোড লিংক--
অহনলিপি-বাংলা১৪ ইউনিকোড ফন্ট প্যাকেজ ডাউনলোড লিংক:  

অথবা 

https://sites.google.com/site/ahanlipi/ 




ডাউনলোড করা এই ইউনিকোড ফন্ট প্যাকেজের মধ্যে আছে ইউনিকোড ফন্ট(কম্পিউটারে লেখার হরফসমূহ) AhanLipi-Bangla14.ttf , তার উপরে ক্লিক করলে ফন্ট ইনস্টল হয়ে যাবে৤ সঙ্গে কিবোর্ড(setup.exe) দেওয়া আছে৤ তাতে ক্লিক করলে কিবোর্ড ইনস্টল হয়ে যাবে৤ কিবোর্ড দিয়ে সহজে লিখতে পারবেন৤ 

 যুক্তবর্ণ স্বচ্ছ, সহজ৤ সঙ্গে কিবোর্ডের নক্সা দেওয়া আছে৤ 


অন্যান্য ফন্টও ডাউনলোড করে নিন৤ 


এই ফন্ট না হলে লেখার উদ্দেশ্য বোঝা যাবে না৤

বাংলাবিদ্যা আলোচনা
মনোজকুমার দ. গিরিশ

      ইংরেজি লেখার রোমান হরফ অতি সরল৤ বিশেষকরে বড় হাতের হরফ বা ক্যাপিটাল লেটার এত সরল যে সারা পৃথিবীর সকল ভাষার মানুষের এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে, এবং আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে৤
      মুখে ভাষা যখন বলা হয়, তখন শুনে শুনে তা বুঝতে হয়৤ বাংলা, ইংরেজি সব ভাষাই তাই৤ তাহলে ইংরেজি মাধ্যমের বাঙালি শিশু কেন বলে, ওঃ! বাংলাটা কী কঠিন? সে কিন্তু চিন্তাভাবনা করছে বাংলাতেই৤ যে ভাষায় মানুষ তার স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা করে সেটাই তার মাতৃভাষা৤ তবুও মাতৃভাষা বাংলাটা তার কঠিন লাগছে, বিমাতৃভাষা ইংরেজিটা কঠিন নয়৤ কেন নয়? এমন কাণ্ড কেন হয়, রহস্যটা কী?
      সেই অনুসন্ধানেই খুঁজে পাওয়া যাবে এর কাঠিন্যের সুত্রটি৤
      বাংলা যে কঠিন তার কারণ লুকিয়ে আছে তার জটিল লিখন প্রক্রিয়া বা লিখনকারিগরির মধ্যে৤ ভাষার কাঠিন্য মুখে উচ্চারিত বাক্য ব্যবহারে নয়, তার কাঠিন্য লিখন সূত্রে৤ এখন তো শোনা যাচ্ছে বাংলাই পৃথিবীর মধুরতম ভাষা৤ কঠিন ভাষা মধুরতম হবে কেমন করে? নিশ্চয়ই কোথাও লুকানো সমস্যা আছে৤ সেটা খুঁজে বার করতে হবে৤
      সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা আছে বাংলার লিখন করিগরিতে৤ স্বর চিহ্ন হল স্বরবর্ণের প্রতীক৤ লেখার সময়ে সাথী বর্ণের সঙ্গে স্বরবর্ণকে সরাসরি ব্যবহার না করে তার প্রতীক ব্যবহার করা হয়, সে গুলিই স্বরচিহ্ন, আর সেই প্রতীক চারিদিক থেকে হরফকে ঘিরে বসে৤ আর ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলা সাথী বর্ণকে একইভাবে ঘিরে বসে৤ ফলে তা হরফের ডান-বাম, উপর-নিচ ঘিরে রাখে৤ ১০টি স্বরচিহ্ন, আর ৮টি ফলা, এই মোট ১৮টি ব্যবহার্য চিহ্ন, কিন্তু এদিকে হরফের মোটে চারটি দিক, তার এতগুলি দিক তো আর থাকতে পারে না৤ হরফের আরও বেশি দিক থাকলে তাও এ সব চিহ্ন ঘিরে রাখত৤
      এসবের প্রতিকার করতে হবে৤ তবে তা একদিনে হবে না, ৫০ বছর ধরে একটু একটু করে এগিয়ে খানিকটা হবে৤ ইংরেজিতে আলাদা করে স্বরচিহ্ন বা ব্যঞ্জনচিহ্ন নেই৤ বাংলা লেখায়ও স্বরচিহ্ন এবং ব্যঞ্জন চিহ্ন রহিত করতে হবে৤ ১০০ বছর ধরে একপা একপা করে এগোতে এগোতে তা হতে পারবে৤ তখন বাংলা লেখাও হবে ইংরেজির মতো হরফ পাশাপাশি পর পর বসিয়ে অনায়াস লেখা৤
      বাংলার সবচেয়ে কঠিন লিখনপর্যায় হল, যুক্তবর্ণ তথা যুক্তব্যঞ্জন৤ ১১টি স্বরবর্ণের ১০চিহ্ন, এবং ণ ন ম য র(র-ফলা, এবং রেফ), ল ব-- এই ৭টি ব্যঞ্জনের ৮টি ফলারূপ কোনওক্রমে আত্মস্থ হলেও বাংলায় প্রচলিত ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ অসাধ্য৤  
      কাজ হল এই ৩৯৫ যুক্তবর্ণের দলা ছাড়িয়ে তাকে স্বচ্ছ করা৤ ষ৏  ধরণের মণ্ড হরফ বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট ‘ষ্ন’ করা৤ শিক্ষার্থী আর ভুল করে ভাববে না যে, এটি ষ+ঞ=ষ৏ ৤ সকল যুক্তবর্ণকে যদি স্বচ্ছ স্পষ্ট করা যায় তবে বাংলার কাঠিন্য ৯০ ভাগই কমে যাবে৤ ল্যাজে গোবরে অবস্থা তো সব এখানেই৤
      তবে চাইলেই কী হবে? এতকালের বিকৃত অভ্যেস, যাকে আমরা সঠিক বলেই জানি, তার গায়ে হাত পড়লে, হাতাহাতি হয়ে যাবে৤ সমাজ সংস্কার-উদ্যোগের জন্য বিদ্যাসাগরকে প্রবাসে তাড়ানো হয়েছিল-- অধিগত বিদ্যাকে, ঐতিহ্যকে যে ব্যাহত করবে তার কী হবে?
      বাংলা বানান এবং লেখা নিয়ে এত যে মতান্তর তার মূল কারণটি রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট করেই বলেছেন__ “একবার যেটা অভ্যাস হইয়া যায় সেটাতে আর নাড়া দিতে ইচ্ছা হয় না৤ কেননা স্বভাবের চেয়ে অভ্যাসের জোর বেশি৤...অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে একটা অহংকারের যোগ আছে৤ যেটা বরাবর করিয়া আসিয়াছি সেটার যে অন্যথা হইতে পারে এমন কথা শুনিলে রাগ হয়৤ মতের অনৈক্যে রাগারাগি হইবার প্রধান কারণই এই অহংকার৤”
      এমন ছাতাধরা বিকৃত ব্যবস্থাকে সংস্কার করলে নবীন প্রজন্ম কিন্তু আমার পক্ষে দাঁড়াবে৤ প্রবীণ প্রজন্মকে তারা বরং কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে-- ১৤মাতৃ ভাষাকেও বিমাতৃভাষার চেয়ে কঠিন করে রাখার জন্য, ২৤লিখন কারিগরি জটিল এবং বিকৃত জেনেও কেন তা সরল করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কঠিন কষ্ট থেকে উদ্ধার করা হয়নি, ৩৤অকারণ সময় নষ্ট, শ্রম নষ্ট, অকাজে মেধার ব্যয় রোধ করেননি, ৪৤বিদেশিরা অবধি বাংলা লেখাকে সরল করতে প্রস্তাব দিলেও কেন তারা নড়ে বসেননি, ৫৤বিদেশিদের আমল দেওয়া হয়নি, তাঁরা বিদেশি, সেজন্য বাংলা লেখাকে তাঁরা যথেষ্ট বিকৃত করতে পারেননি বলে? ৬৤লেখা তো অভ্যাসের ব্যাপার, প্রাকৃতিক নিয়ম নয়, তাহলে তা সংশোধন করতে বাধা কীসের, ৭৤বাংলা ছাপা শুরু হয় বিদেশি ইংরেজদের হাতে ১৭৭৮-এ, সেখানে ছাপার লেখায় যে লজিক ছিল, তা রক্ষা করা হয়নি, ৮৤শিক্ষা কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার এই প্রয়াস কেন?
      

এই মুহূর্তে যুক্তবর্ণসমূহ আগে স্বচ্ছ করা হবে, চালু স্বরচিহ্ন পরে লোপ করা হবে(কারণ স্বরচিহ্ন আয়ত্ত করা কিছুটা সহজ)৤ এখন বাংলায়ও আধুনিক ইউনিকোড ফন্ট(কম্পিউটারে লেখার হরফ সমূহ) তৈরি হয়েছে৤ কিন্তু সেই ইউনিকোড ফন্ট হল প্রথম প্রজন্মের ফন্ট৤ বাংলা দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট হল-- আরও অগ্রগত ইউনিকোড ফন্ট৤ নতুনতর এই প্রস্তাবিত ফন্টটি হবে দ্বিতীয় প্রজন্মের লিখন কারিগরি সম্পন্ন৤ এতে দলাপাকানো যুক্তবর্ণ বা মণ্ড হরফ নেই৤ বাংলা যুক্তবর্ণ গঠনের দুটি নির্দিষ্ট সূত্র বা ফর্মুলা তৈরি হয়েছে, যা সকল যুক্তবর্ণকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে গঠনে সহায়তা করবে৤ 
c1c2-- ক্ক, চ্ছ, জ্জ, ট্ট, ড্ড, ণ্ণ, ত্ত, দ্দ, দ্ধ, ন্ন, প্স, ফ্ল, ভ্ল, ম্ল, 
শ্ম, ষ্ট, স্প, হ্ন  
  
c1c1c2-- ক্ষ্ণ, ক্ষ্ম, ঙ্ক্ষ, চ্ছ্ব, জ্জ্ব, ত্ত্ব, দ্দ্ব, দ্ধ্ব, ন্ত্ব, ন্দ্ব, ষ্ক্ব, স্ত্ব, স্প্ল  




      এখানে C  হল Consonant বা ব্যঞ্জনবর্ণ৤ c1 হল যুক্তবর্ণের প্রথম বর্ণ,  c2 হল যুক্তবর্ণের দ্বিতীয় বর্ণ৤ প্রথম এবং দ্বিতীয়, দুটি বর্ণই অখণ্ড, অক্ষত, অবিকৃত থাকবে, তবে প্রথম বর্ণটি হবে আয়তনে কিছুটা ছোটো, আর দ্বিতীয় বর্ণটি যথাযথ পূর্ণ মাপের৤ প্রথমটি তথা c1 হবে দ্বিতীয় তথা c2 বর্ণের ২/৩ ভাগ৤ দুটি বর্ণই মাত্রা বরাবর লেখা হবে, অর্থাৎ একই মাত্রায় দুটি বর্ণের অবস্থান হবে৤
      বাংলায় যুক্তবর্ণ হয় (১)দুই বর্ণ মিলে, (২)তিন বর্ণ মিলে, এবং (৩)চার বর্ণ মিলে৤ তবে চার বর্ণের মিলন প্রকৃতপক্ষে তিন বর্ণেরই হেরফের৤ চার বর্ণের বেশি বর্ণ মিলে বাংলায় যুক্তবর্ণ হয় না৤
      এই মুহূর্তে হয়তো ছাপায় এর উদাহরণ দেখানো যাবে না, তবে এর ফন্ট ডাউনলোড করে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে৤ ফন্ট প্যাকেজের লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip  
      এই ফন্টের মধ্যেই আছে তৃতীয় প্রজন্মের লিখন কারিগরি প্রকৌশলও, যেখানে সকল স্বরচিহ্ন সাথী বর্ণের পরে বসবে৤ তবে বানান সংস্কার করে নেওয়ার পরে তার যা অবস্থা দাঁড়াবে, লেখালিখি হবে সেই অনুসারে৤ যুক্তবর্ণ হবে দ্বিতীয় প্রজন্মের লিখন কারিগরির মতোই সম্পূর্ণ স্বচ্ছ৤
      বাংলা লেখা তিন তলা৤ দ্বিতীয় প্রজন্মেও তা তিন তলাই থাকবে, তৃতীয় প্রজন্মে এসে তা হবে দুই-তলা৤ ৫০ বছর পরে এই কারিগরি ব্যবহার্য৤ তার আগে দ্বিতীয় প্রজন্মের লিখন কারিগরি কৌশলে অভ্যস্ত হয়ে নিতে হবে৤
      বাংলা বানান সংস্কার নিয়ে আমাদের শিথিলতা এতই, যে ‘ঋ, ঌ’ বর্ণ স্বরধ্বনি হিসেবে লুপ্ত হয়েছে বাংলাভাষা জন্মের আগে, তা অবধি আমাদের ভাঁড়ারে রক্ষিত! তবে এ কথাও ঠিক যে দুম করে সব সংস্কার একবারে করলে হবে না৤ ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে করতে হবে, ধাপে ধাপে৤ নইলে বাংলাভাষাই চেনা যাবে না যে!  
      এই একই ফন্টের মধ্যেই আছে চতুর্থ প্রজন্মের লিখন কারিগরি প্রকৌশলও৤ চতুর্থ প্রজন্মের লিখনে স্বরচিহ্ন, এবং ব্যঞ্জনচিহ্ন/ফলা লোপ পাবে৤ যুক্তবর্ণ আগের মতোই স্বচ্ছ হবে৤ লেখা হবে ইংরেজির মতো
এক-তলা (Monotier), এবং হরফ পাশাপাশি পর পর বসিয়ে৤ তবে বানান সংস্কার করে নেওয়ার পরে তার যা অবস্থা দাঁড়াবে, লেখালিখি হবে সেই অনুসারে৤ লেখা এক-তলা হবার ফলে হরফের মুদ্রণ খাড়াই বাড়বে, মুদ্রণ-স্থান কম লাগবে, ফলে মুদ্রণ ব্যয় কম-- বইয়ের দাম কমবে প্রথম প্রজন্নের লিখনের তুলনায় ৪০%চল্লিশ শতাংশ৤

      এখানে বানান সংস্কার করা হয়েছে, বাংলা লেখা তখন হবে সকল সংস্কারমুক্ত, বাধামুক্ত৤ সেইলক্ষ্যে এগোতে হবে৤ এর প্রয়োগ হবে ১০০ বছর পরে৤ আগে ২য়, এবং ৩য় প্রজন্মের লিখনে রপ্ত হবার পরে৤
      ফন্ট প্যাকজে দেওয়া আছে-- ফন্ট, কিবোর্ড, এবং অন্য সকল প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা৤ উল্লেখ্য দ্বিতীয় প্রজন্মের লিখন কারিগরিতেই বাংলা লেখা যৌক্তিকভাবে ইংরেজি লেখাকে ছাপিয়ে গেছে৤
দেখুন লিংক:http://banglamoy.blogspot.in/2014/10/blog-post.html

      আমরা যখন বলি-- ‘ব’ তখন সেটা আসলে ব্‌+অ৤ ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ করতে হলে স্বরধ্বনির সাহায্য চাই৤ ‘ব্‌’ ‘ক্‌’ ধ্বনি বা এরকম যেকোনও ব্যঞ্জনধ্বনি কঠিন উচ্চারণের ধ্বনি৤ সকল ব্যঞ্জনবর্ণেরই উচ্চারণ দাঁত ভাঙা৤ আর একথা ঠিক যে, ব্যঞ্জনবর্ণধ্বনি স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করতে হলে যে-কোনও একটি স্বরের সাহায্য নিতেই হয়৤ সেটা অ থেকে ঔ অবধি যেকোনও স্বরধ্বনি হতে পারে৤ তবে সেটা সাধারণভাবে হল ‘অ’ স্বর৤ অন্য সকল স্বরবর্ণের যেমন চিহ্ন আছে, অ-এর কোনও পৃথক বাহ্য চিহ্ন নেই৤ স্বরবর্ণের চিহ্নগুলি বা দ্বিতীয় রূপকে বলে স্বরচিহ্ন, অর্থাৎ স্বরধ্বনির দ্বৈতীয়িক রূপ বা Secondary form. স্বরবর্ণগুলি সরাসরি ব্যঞ্জন বর্ণের সঙ্গে মিলিত না করে তা এক-একটি চিহ্নরূপে সংযুক্ত করা হয়৤ এগুলিই স্বরচিহ্ন৤
স্বরবর্ণ ১১টি তাদের ১০টির বাহ্য চিহ্ন বা প্রদর্শনযোগ্য চিহ্ন আছে, শুধু ‘অ’-এর কোনও বাহ্য চিহ্ন বা প্রদর্শনযোগ্য চিহ্ন নেই৤ ১১টির মধ্যে এই একটির না থাকাই(বা অদৃশ্যভাবে উপস্থিত থাকাই) তার অস্তিত্ব বা অবস্থিতি প্রমাণ করে৤ খেয়াল রাখতে হবে ব্যঞ্জনবর্ণের সহজ উচ্চারণের সুবিধার জন্য ‘অ’-ধ্বনি যোগ হবার এই ব্যবস্থার জন্যই বাংলা বর্ণমালা আসলে সেমি-এ্যালফাবেটিক, আর ইংরেজি বর্ণমালা কিন্তু পূর্ণ এ্যালফাবেটিক৤

ি
কা
কি
কী
কু
কূ
কৃ
কে
কৈ
কো
কৌ
     
তাই, ব্‌+অ-কার=ব+♥=ব,   ব্+ই-কার=ব্‌+ি=বি৤  ব্‌+উ-কার=ব্‌+ু=বু

        ব্‌+অ=ব, এখানে ‘ব’ হল পূর্ণ উচ্চারণ সম্পন্ন বর্ণ৤ অ-এর কোনও নিজস্ব বর্ণচিহ্ন না থাকায় এখানে ‘অ’-এর উপস্থিতি দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে বোঝা যায় না৤ যদি অ-এর চিহ্ন হিসেবে অ=৹ গ্রহণ করা হয়-- ব্‌+অ=ব৹ হয়, তবে তা চোখের সামনে থাকত বলে তার অস্তিত্ব স্পষ্ট হত৤ তা হলে,  লিখতে পারতাম-- ক৹ কা কি কী কু কূ কৃ কে কৈ কো কৌ
      তবে তখন ‘অ’ চিহ্ন আর অদৃশ্য, অন-অনুভব্য থাকত না৤ যদিও দর্শনযোগ্য না থাকলেও তার অস্তিত্ব অবশ্য অনুভব্য, কিন্তু সর্বদা তা খেয়াল থাকে না৤ ফলে তা যে আছে তা মনে না করিয়ে দিলে তা মনে পড়ে না৤ তাহলে কি এবার অ-এর চিহ্ন ব্যবহার করা হবে? যেমন-- ক৹ দ৹ ম৹ চ৹ ইত্যাদি৤ না, তেমন করলে সমস্যা বড়বে ছাড়া কমবে না৤ তখন লেখা এবং ছাপা খুবই জবরজং হয়ে উঠবে৤ লিখতে পড়তে বুঝতে অসুবিধে হবে, তাই অ-এর বাহ্যচিহ্ন নতুন করে প্রদর্শনের দরকার নেই৤
      সব্‌জি=সব্জি, মন্‌দ=মন্দ, খাপ্‌পা=খাপ্পা, জব্‌বর=জব্বর ইত্যাদি লিখতে সর্বত্র হস্‌চিহ্ন ব্যবহার করা সুবিধাজনক হবে না, বরং  ছাপা, লেখা, এবং পড়া জটিল হয়ে উঠবে৤ ঠিক তেমনিভাবে প্রতিটি ব্যঞ্জনে একটি করে অ-চিহ্ন(৹) দেওয়া সুবিবেচনা নয়৤
      যদি লিখি ‘বই’ তবে প্রথম হরফ হল-- ব্‌+অ=ব, এবং তার পরে সাধারণ ‘ই’-স্বরবর্ণ৤ ‘ব’, ‘ই’ বর্ণদুটি পাশাপাশি বসে ‘বই’৤ কিন্তু ‘বি’ লেখার অর্থ  হল-- ব্‌+ই-কার=ব্‌+ি=বি৤ বলা যায় যেন, দুটি বর্ণ মিলে একাত্ম বা দলা পাকানো বর্ণরূপ৤ ‘ব’ এবং ‘ই’ মিলে হয়েছে ‘বি’৤ এখানে ‘ই’ সরাসরি মিলিত না হয়ে তার চিহ্নরূপ ‘ি’ ব্যবহার করা হয়েছে৤ ভবিষ্যতে স্বরচিহ্ন লোপ করে লিখলে তা হবে-- ব্‌+ই= ব্‍ই৤ ই-এর কোনও দ্বৈতীয়িক রূপ বা স্বরচিহ্ন(ি) থাকবে না, কেবল ‘ব্‌’ হবে তার উচ্চারণের মতোই লঘু আয়তনের-- ব্‍ই৤ কি=ক্‍ই, পি=প্‍ই৤
      এটা কিন্তু ‘বই’ নয়, এটা ‘বি’(ব্‍ই)৤ ব-এর ব্যঞ্জনান্ত উচ্চারণ এবং তারপরে ই-ধ্বনি-- ব্‍ই৤ এই উচ্চারণই আমরা করি ‘বি’ লিখে (ব্‌ি--ব্‌ই)৤ এখানে লেখার কৌশলটি শুধু আলাদা, বিষয় সম্পূর্ণ একই(ব্‍ই)৤ ব-এর উচ্চারণ লঘু বা ব্যঞ্জনান্ত তাই তার গঠনও লঘু, লেখায় সেটা প্রকাশিত, পুরানো কায়দা -- বি, নতুন ব্যবস্থায়=ব্‍ই৤
      আবার গন্ধ=গন্‌ধ=গন্ধ৤ এখানে ‘ন্‌’ হল অ-বর্জিত ব্যঞ্জনধ্বনি৤ সেটি পূর্ণ বর্ণ ‘ধ’-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে৤ তাই তা-- গন্‌ধ=গন্ধ(গন্ধ)৤ এটি আরও স্পষ্ট হয় যদি লেখা হয়-- গ৹ ন্‌ ধ৹৤ গ৹ন্‌ধ৹=গ৹ন্ধ৹৤  
      যদি ‘অ’-এর বাহ্য-চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তবে অল্প কিছু সমস্যা কমবে ঠিকই, কিন্তু সমস্যা বাড়বে অনেক বেশি৤ তাই অ-এর বাহ্যচিহ্ন প্রয়োগ করে লাভ নেই৤
      যদি লিখি ব৹ই তবে এটা যে বই, তা বেশ বোঝা গেল, কিন্তু ‘বি’ লিখতে গিয়ে তা কি হবে-- ব৹ি৤ তাই পুরানো স্বরচিহ্ন বা স্বরবর্ণের দ্বৈতীয়িক রূপ বর্জন করে লেখা হল-- ব্‍ই(এর বিকৃত চালু রূপ হল ‘বি’)৤ এটা কিন্তু ব্‍৹ই নয়৤ এখানে ব-ধ্বনি অ-কারান্ত নয়, ব্যঞ্জনান্ত-- ব্‍ই(ব্‌-ই)৤  
      প্রাথমিক ব্যবহারে এটা খুবই অসুবিধাজনক মনে হবে, তাই এটি ৪র্থ প্রজন্মের লিখন, আর তা লেখা হবে এখন থেকে ১০০ বছর পরে৤ ইতিমধ্যে ২য় এবং ৩য় প্রজন্মের লিখন কারিগরিতে অভ্যস্ত হতে হবে৤ কারণ একটি প্রজন্মের লিখনের সঙ্গে পরবর্তী লিখনের উত্তরপুরুষ সম্পর্ক আছে৤
দেখা যাক এক-এক প্রজন্মে লিখন কেমন হবে?

প্রজন্ম
যুক্তবর্ণ
উদাহরণ
লিখন
প্রচলন কাল
প্রথম প্রজন্ম
দলাপাকানো যুক্তবর্ণ
সম্মান সঙ্কট
খর্জুর
লেখা তিন তলা
চালু রীতি





দ্বিতীয় প্রজন্ম
স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ
সম্মান সঙ্কট
খর্জুর
লেখা তিন তলা
নতুন আগত রীতি





তৃতীয় প্রজন্ম
স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ
ত্‍রীতীয়
প্‍রজন্ম
খ৒জুর
লেখা দুই তলা
নতুন আগত রীতি ৫০ বছর পরে





চতুর্থ প্রজন্ম
স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ
দ্ব্‍ইত্‍ইয় প্‍রজন্‍ম
খ৒জ্‍উর
লেখা এক তলা
নতুন আগত রীতি ১০০ বছর পরে

      এসব লেখা দেখে এখন আঁতকে যেতে হয়, ১০০ বছর পরে তা বরং বরণীয় মনে হবে৤ ১৯৩৫-এ লাইনো টাইপ চালু হবার কালে যেমন যুক্তবর্ণের দলা ছাড়ানোর ব্যবস্থা দেখে এমনি ভয় হয়েছিল৤ কিন্তু সেটাই ছিল সঠিক লিখন৤ পরে আর না এগিয়ে গোয়ালের গরু গোয়ালে ফিরে এসেছে৤ তার কারণ ব্যবসায়ে লাভ বৃদ্ধি, আর এদিকে যে ভাষার সমৃদ্ধি নষ্ট হচ্ছে তার দিকে নজর নেই কেন?  






1 টি মন্তব্য: