সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাভাষা: সুখের বাসা




বিনামূল্যে ফন্ট ডাউনলোড লিংক--
অহনলিপি-বাংলা১৪ ইউনিকোড ফন্ট প্যাকেজ ডাউনলোড লিংক:  

বাংলাভাষা সুখের বাসা 



ডাউনলোড করা এই ইউনিকোড ফন্ট প্যাকেজের মধ্যে আছে ইউনিকোড ফন্ট(কম্পিউটারে লেখার হরফসমূহ) AhanLipi-Bangla14.ttf তার উপরে ক্লিক করলে ফন্ট ইনস্টল হয়ে যাবে৤ সঙ্গে কিবোর্ড(setup.exe) দেওয়া আছে৤ তাতে ক্লিক করলে কিবোর্ড ইনস্টল হয়ে যাবে৤ কিবোর্ড দিয়ে সহজে লিখতে পারবেন৤ 

 যুক্তবর্ণ স্বচ্ছসহজ৤ সঙ্গে কিবোর্ডের নক্সা দেওয়া আছে৤ 


অন্যান্য ফন্টও ডাউনলোড করে নিন৤ 



এই ফন্ট না হলে লেখার উদ্দেশ্য বোঝা যাবে না৤



সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

 (bottom right) click on down arrow head 

Settings
Default input Language
Bengali(India)--Bn14
Installed Services
(move up)--BN Bengali(India)--Keyboard--Bn14
                   EN English
 -->OK
→→→→→ (Display Clipboard--Font--Paragraph--Styles--Editing
(right corner) styles
Normal--right click
Modify
Modify style
Normal
formatting
AhanLipi-Bangla14=11point
all script/complex
New documents Based on this template 
Format 
Font
Latin text
Font
AhanLipi-Bangla14, Regular =11point
Complex scripts
Font
AhanLipi-Bangla14, Regular =11point
-->OK
-->OK
এবারে টেক্সটে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ AhanLipi-Bangla14 ফন্টে সকল কিছু লেখা যাবে৤ 
এবং
অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet font setting)
Default Internet font setting ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং

   
on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options > contents
              Fonts & Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced... 
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -->OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -->OK
  --> OK
          এবারে ইন্টারনেট খুললে অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে একই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤ 





বাংলাভাষা: সুখের বাসা 


বাংলাভাষা: সুখের বাসা 



বাংলাভাষা: সুখের বাসা
মনোজকুমার দ. গিরিশ

       বাংলা বানানে ভুলের আশঙ্কা পদে পদে, বানানে যে অজস্র ভুল হয়, সে আমরা সবাই জানি৤ কিন্তু কত ভুল হয়? অর্থাৎ সাধারণভাবে কত শতাংশ বানান ভুল হতে পারে? প্রশ্নটা আবার করি-- সাধারণভাবে বাংলা বানানে কত শতাংশ বানান ভুল হতে পারে? এ এক অদ্ভুত প্রশ্ন বটে৤ তবে হিসেব কষে এই ভুল নির্ধারণ করা সম্ভব৤
       হিসেব কষে দেখা গেছে সাধারণভাবে বাংলা বানানে ৩১.৭৬%(৩১.৭৬৪০২৭%) শতাংশ ভুল হতে পারে৤ এই হিসেবটা কীভাবে নির্ধারণ করা হল?
       প্রথমে বের করতে হবে বাংলা বর্ণ ব্যবহারের তুলনাঙ্ক তথা বাংলা-বর্ণতুলনাঙ্ক বা Bangla Letter Frequency অর্থাৎ বাংলা লিখতে গেলে কোন্‌ হরফ কতবার ব্যবহার করা হয়, তা নির্ধারণ করতে হবে৤ ধরি একটি বাক্য লিখলাম, সেখানে কোন্‌ হরফ কতবার ব্যবহার করা হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারব৤ কিন্তু এরকম বাক্যের তো শেষ নেই,  লক্ষ লক্ষ বাক্য লেখা যেতে পারে৤ তা থেকে কেমন করে এসব হিসেব কষা যাবে? এরকম হতে পারে যে, কম্পিউটারে কিছু লেখা হল, সেখানে কোন্‌ কি(Key) কত বার চাপা হয়েছে অর্থাৎ হরফ লেখার জন্য টাইপ করা হয়েছে তা নির্ধারণ করতে পারলে এটা নির্ণয় করা যাবে৤ আর এক হতে পারে, লেখাটি ছাপার পরে সেখানে কোন্‌ হরফ বা চিহ্ন ইত্যাদি কতবার ব্যবহার করা হয়েছে তা বের করা৤ এটা করতে পারলে বাংলা হরফ ব্যবহারের তুলনাঙ্ক বা Letter frequency পাওয়া যাবে৤ তবে কোনও একটি বিশেষ বই ধরে এটা করলে কিন্তু সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে না৤
       আমি যেটা করেছি তা হল, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তখন ‘যুগান্তর’ কাগজটি চালু ছিল, এবং বহুল প্রচারিত৤ একটা দিন দেখে(১৬/০২/১৯৭৪) কাগজ বাছলাম যেদিন গুরুত্বপূর্ণ কোনও খবর নেই, নইলে যে একই ধরনের শব্দ বা হরফ ঘন ঘন ব্যবহৃত হবে৤ তাই সাধারণ একটা দিন বেছে নেওয়া হল যেদিন জোরালো কোনও খবর ছিলনা, অর্থাৎ একই ধরনের শব্দ বার বার ব্যবহৃত হয়নি৤ এরপরে একটা বড় গ্রাফশিট নিয়ে সেখানে বাংলা সকল স্বরবর্ণ, সকল ব্যঞ্জনবর্ণ, স্বরচিহ্ন, সকল ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলাগুলি লেখা হল এবং ব্যবহার অনুযায়ী চিহ্নিত করা হল৤ এভাবে  হিসেব কষে একটা ব্যবহারের তুলনাঙ্ক স্পষ্ট হল৤ তখন দেখা গেল যে, বাংলায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণ হল--“র”৤ এটা একটা নমুনা পরীক্ষণ(Sample survey) হলেও মূল বিষয়টি এতে ধরা পড়েছে৤ তার আগে এসব নিয়ে তথ্যপূর্ণ বই অনেক খুঁজেছি, জাতীয় গ্রন্থাগারে বার বার গিয়েছি৤ তবে সেখানে এধরনের বই না পেলেও অন্য বিষয়ের মূল্যবান বই পেয়েছি যা আমার অন্য কাজে লেগেছে৤
       এই অনুসন্ধানের জন্য যদি অন্তত ১কোটি অন্তর্ভুক্তি(entry) পর্যবেক্ষণ করা যায় তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভুল বলে ধরা যাবে৤ পরে অবশ্য বাংলা বর্ণ তুলনাঙ্ক অন্য দুজনে করেছেন, তাঁদের কাজের প্রয়োজনে৤ তাঁদের একজন মুদ্রণ বিশেষজ্ঞ(প্রসূন দত্ত), অন্যজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ(ডঃ সমর ভট্টাচার্য)৤ বাংলা বর্ণতুলনাঙ্ক সম্পর্কে আমার লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ পত্রিকায়(জানুঃ-মার্চ ১৯৭৬)৤

       বাংলা বর্ণতুলনাঙ্ক আমার কেন প্রয়োজন হল? আমি চাইছিলাম বাংলা যুক্তবর্ণ সরল করে লেখা হোক৤ তখনও কম্পিউটার আসেনি তাই তার প্রয়োগ টাইপরাইটারে করা যায় কিনা তার চেষ্টা করছিলাম, এবং তেমন হলে ভবিষ্যতে কম্পিউটারের কিবোর্ড কেমন হবে তার নকশা বানাচ্ছিলাম৤ ফলে কিবোর্ডের কোন্‌ কি(Key) কোন্‌ বাংলা হরফের জন্য ব্যবহার করা হবে তার পরিকল্পনা তৈরি করতে বাংলা বর্ণের তুলনাঙ্ক দরকার হল৤ বর্ণ তুলনাঙ্ক তৈরি করে একাধিক কিবোর্ডের নকশা করে তা পরীক্ষা করতে লাগলাম৤ এর মধ্যে কাগজে একটি খবর দেখলাম যে একজন ব্যক্তি
ত্রি-ভাষা টাইপরাইটার তৈরি করে দিল্লির প্রদর্শনীতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন(ডি. আর. দত্ত-- দেবকীরঞ্জন দত্ত, বালিগঞ্জ)৤ আমি সেই উদ্ভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করি৤ সেই টাইপরাইটার দিয়ে বাংলা লেখার চেষ্টাও হয়, যদিও প্রদর্শনীতে তিনি ত্রিভাষা বললেও মডেলটি ছিল দ্বিভাষা৤ উন্নতির সুযোগ ছিল, সেখানে বাংলা ব্যবহার করা হল৤ আমি চাইছিলাম সেই টাইপরাইটারে বাংলা লেখায় যুক্তবর্ণ সরল করে লেখা যায় কিনা তা দেখতে৤ দেখা গেল, কোনওরকমে হয়তো তা করা যাবে, তবে পরীক্ষ-নিরীক্ষা তো একবারে শেষ হবে না, তার ব্যয় অতি বিপুল হবে, কোম্পানিকে অর্ডার দিয়ে অনেক বারই টাইপফেস পালটে বানাতে হবে৤ তাই আমি আমার প্রয়াসের অভিমুখ ঘুরিয়ে কম্পিউটারে বাংলা লেখার চেষ্টায় লেগে গেলাম,
যে-বাংলা লেখায় যুক্তবর্ণ হবে সরল, সহজ, যা সকলে অনায়াসে পড়তে পারবে, যা হবে স্বচ্ছযুক্তবর্ণ৤
       আমার একটি অভিজ্ঞতা এরকম যে, একবার পুরীতে গিয়ে বেশ কিছুদিন থাকি, তখন বই কিনে ওডিয়া ভাষা শেখার চেষ্টা করি৤ প্রথম দিকে খুব ভালোই এগোলাম, পরে যখন যুক্তবর্ণে পৌঁছোলাম, তখন তার নব্য নব্য রূপ দেখে বাধ্য হলাম ওডিয়া শেখা ছেড়েই দিতে৤ আমার মনে হল, বাংলা শিখতে গিয়ে অন্যদেরও ঠিক একই অবস্থা হয়, অথচ বাংলা ভারতের শ্রেষ্ঠ ভাষা৤ তাই বাংলা যুক্তবর্ণ যে সরল করতেই হবে, এ থেকে এটা আমার কাছে আরও স্পষ্ট হল৤
       পরে যখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার চেষ্টা করি, সেখানে সহজ যুক্তবর্ণ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি৤ এসবের অনেক অনেক আগেই অবশ্য ড্রইং শিটে কয়েক বছরের দীর্ঘ চেষ্টা ও পরিশ্রমে বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ণমালা এঁকেছি/তৈরি করেছি, যেখানেই হয়েছে সরল যুক্তবর্ণ গঠনের আদি সূত্রপাত(১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ)৤

       প্রথমে দীর্ঘ প্রয়াসে সে হরফ কম্পিউটার প্রোগ্রামের ভাষা ‘বেসিক’-এ রূপ দেবার উদ্যোগ নিই৤ সেভাবে যদিও বর্ণ গঠন হল, কিন্তু তা ঠিক মনের মতো হয়নি৤ পরে উইন্ডোজ-এ দীর্ঘ দিনের চেষ্টায় নন-ইউনিকোড ফন্ট(হরফসমূহ) বানাই, এবং তা দিয়ে লেখালিখি শুরু করি৤ লেখালিখি চলতে থাকল, কোথাও আটকায় কিনা তা এতে বোঝা যাবে৤ এবং অনেক পরে অবশেষে উইন্ডোজ-এ দুরূহ ইউনিকোড ফন্ট বানানো সম্ভব হয়, বহুদিনের বহু চেষ্টায়৤ যাকে বলে আদাজল খেয়ে লেগে থাকায়, সেসব তৈরি সম্ভব হয়েছে৤ বিশেষজ্ঞ নই বলেই আমার এত দীর্ঘ সময় লেগেছে৤ সহজ এবং সরল যুক্তবর্ণ ব্যবহার করে ফন্টটি তৈরি করা হয়েছে ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের’ ফন্ট হিসেবে৤
       বাংলায় ইউনিকোড ফন্টের যাতে আরও চর্চা হয় এবং আরও অনেকে বাংলায় ইউনিকোড ফন্ট তৈরি করে বাংলাভাষার উন্নয়নে এগিয়ে আসেন, এই উদ্দেশ্যে ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকায় ইউনিকোড ফন্ট কেমন করে গঠন করতে হয় তা নিয়ে প্রবন্ধ লিখি (জুলাই ২০০৮ -আগস্ট ২০০৮ -নভেম্বর ২০০৮)৤ তার লিংক: http://banglainternational.blogspot.in/2013/07/creating-bangla-unicode-font.html

       বিশ্বের সকল ইউনিকোড ফন্টই আন্তর্জাতিক ইউনিকোড কনর্সোটিয়ামের কোড ব্যবহার করে তৈরি৤ বাংলা ইউনিকোড ফন্টের আর কোনওটিই এখন অবধি দ্বিতীয় প্রজন্মের যুক্তবর্ণ গঠন-সহ তৈরি হয়নি৤ ফলে এই ফন্ট ব্যবহার করে যুক্তবর্ণের/যুক্তধ্বনির ক্ষেত্রে বাংলা লিখন ইংরেজি লিখনকে ছাপিয়ে গেছে৤ এ বিষয়ে “বাংলাময়” ব্লগে তার বিস্তারিত ব্যাখা আছে৤ লিংক: http://banglamoy.blogspot.in/2014/10/blog-post.html

       ইংরেজি ভাষা ইংরেজিহয়েছে-- অর্থাৎ উন্নত ও আন্তর্জাতিক হয়েছে ইংরেজদের প্রাচীন ল্যাটিন ঝোঁক ত্যাগ করার পরে৤ তার আগে ইংরেজি ছিল সাধারণ অনাদৃত গাঁইয়া ভাষা৤ দি নিউ ক্যাক্সটন এনসাইক্লোপিডিয়াতে বলা হয়েছে[বাংলায় সরল অনুবাদে] __“অষ্টাদশ শতকে সরল সাধারণ ইংরেজিতে লেখার ব্যাপারটা ছিল আটপৌরে ঘরোয়া ব্যাপার৤ যেন পরচুলো না-পরে নিজস্ব চুলেই সাজগোজ করা[সে যুগে পরচুলা ছিল অভিজাতদের নিয়মিত পোষাকের অঙ্গ]৤ ঊনবিংশ শতকে
দেশি-ইংরেজি শব্দ জনপ্রিয়তা ফিরে পেল, তবে তা সংগ্রাম না-করে হয়নি৤” (সংস্করণ- ১৯৭৯, খণ্ড-৭, পৃঃ-২৬৪)৤ 
       ভাষা হল জীবন ও জীবিকার মূল হাতিয়ার৤ তাকে দৃঢ়, জীবিত এবং প্রাণবন্ত
রাখাই সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজ৤
       প্রথমে বাংলা বর্ণতুলনাঙ্ক তৈরি হল, তারপরে কি-টপ এ্যাকসেসিবিলিটি
(Key-top accessibility) নির্ণয় করে, দুটি মিলিয়ে বাংলা কিবোর্ড তৈরি করে লেখালিখি শুরু হল৤ দেখা গেল যে তাতে কি-টপ মনে রাখা বা মুখস্থ করার চাপ অনেক৤ ফলে সিদ্ধান্ত পালটানো হল৤ কম্পিউটারের কি-বোর্ড তো ইংরেজিতেই,  তাই ইংরেজি হরফের ‘টপ’ ধরে ধরে বাংলা হরফ মিলিয়ে নতুন করে কিবোর্ড তৈরি করা হয়, যেমন-- k=ক, g=গ, p=প, l=ল  ইত্যাদি৤ এর ফলে কিবোর্ড এত সহজ হয়েছে যে, মনে রাখার চাপ খুব কম৤ এমনকি যে-ব্যক্তি প্রথম এই বোর্ডে বাংলা লিখতে শুরু করবে সে-ও এই কিবোর্ডের কিছুমাত্র না জেনেও অনেক শব্দ লিখে ফেলতে পারবে, যেমন-- মা বাবা কাকা কাকি দিদি পিসি দিদা, ফুফা চাচা, ফাদার; সজল দাস, কনক পাল, মদন সাহা, জহর বল, পরিমল সেন, মুনমুন রায়, নুরি মিয়া, জসিম, জন বুল ইত্যাদি৤
       এর ফলে কিবোর্ড তৈরিতে বাংলা বর্ণতুলনাঙ্ক আর কাজে লাগল না ঠিকই, কিন্তু কিবোর্ড তৈরির চেয়েও এর এক অতি বড় ভূমিকা অনুধাবন করা গেল এই যে, বাংলা বানানে ভুলের ব্যাপারটা বর্ণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত তাই, যে বর্ণের যত শতকরা হার, লেখায় তার ভুলের আশঙ্কাও ঠিক তাই-ই, অর্থাৎ তা বর্ণতুলনাঙ্কের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত৤ ফলে ই-ঈ, ি-ী জনিত মোট ভুল হতে পারে ৮.০৪৩৯% শতাংশ৤ ঈ বর্জন করলে ভুলের এই আশঙ্কাটা আর থাকছে না৤ অর্থাৎ বানান ভুল-রহিত হচ্ছে ৮.০৪৩৯%শতাংশ৤ বাংলায় বানান ভুলের সাধারণ আশঙ্কা হল ৩১.৭৬% শতাংশ, তা থেকে ৮.০৪৩৯%শতাংশ বাদ গেলে এক বিশাল পরিমাণ বানান ভুল কমে যাবে৤ তা মোট ভুলের প্রায় সিকি ভাগ৤ এতে যে মস্ত সুবিধা হবে, এবং ফলে বিপুল জন-প্রতিক্রিয়া হবে, তাতে বানান ভুল রহিতকরণের প্রতি সামাজিকভাবে জোরালো  জনসমর্থন তৈরি হবে৤
       যদি ধাপে ধাপে বর্ণ ধরে ধরে ভুলগুলো রহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে প্রায় ৫০ বছরে বাংলা বানানের সকল ভুল রহিত হবে৤ তখন বাংলা ভাষা এগোবে দ্রুত বেগে৤ মহাকাশ যুগের অজ পাড়াগাঁয়ের যে ছেলেটি সবে বাংলা লিখতে শিখেছে, তারও অবধি আর বাংলা বানানে ভুল হবে না৤ ‘ঈ’ যদি বর্জিত হয়, তবে সে-- ইট, ইগল, ইদ লিখবে তো নির্ভুল ভাবেই৤ ‘ঈ’ নেই তো সে-- ঈগল, ঈদ লিখতেই পারবে না৤ ি/ী সমস্যাও একদম থাকবে না৤ তাহলে আর ই/ঈ, ি/ী জনিত ভুল হবে কেমন করে? তাই সঠিক উদ্যোগ নিলে ভবিষ্যতে বাংলা বানান এমন হবে যে, বানান ভুল আর হবে না, আসলে বানান আর ভুল করাই যাবে না! অথচ এখন বাংলা বানান ঠিক করে লেখাই কঠিন৤ যা নেই, তাও আছে, এই অলীক কল্পনা করে আমরা অলীক হরফের দেহ বজায় রেখে দিয়ে গোল পাকাচ্ছি৤ এখন কি কেউ লিচু লিখতে ধরি, ঌচু লিখবে? এখন ঌ(=লি) নেই তো লিখবে কেমন করে? বানান শোধন নিয়ে তাই নতুন করে ভাবতে হবে৤ যে-বর্ণ সত্যিই নেই তাকে বর্জন করার শোক ত্যাগ করতে হবে, এ নিয়ে পাপ-ভয়ও অলীক৤ বাংলায় বেশ কয়েকটি বর্ণদেহ আছে যা সত্যিই বাস্তবে নেই, লেখার মধ্যে চলছে বলে আমরা ধরে নিচ্ছি যে তারা আছে৤ এককালে যেমন বর্ণমালায় ড়ঢয় ছিলনা, যদিও লিখন ব্যবহারে ছিল৤ বিদ্যাসাগর এবর্ণগুলি বর্ণমালার অন্তর্ভুক্ত করেন৤
       যেসব বর্ণ ভাষার বোঁটায় শুকিয়ে খসে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে, তাদের নিয়ে অকারণ সব উদ্ব্যস্ততা৤ ঌ খসে যাওয়ায় কি কোনও শোক বা পাপ হয়েছে? বর্ণমালা থেকে স্বরবর্ণ দীর্ঘ ঋ(ৠ), দীর্ঘ ঌ(ৡ) বর্জন করেই তো বিদ্যাসাগর নমস্য হয়েছেন৤ নয়তো সেসবও হয়তো ভাষার শাখায় শাখায় এখনও দুলত, আর আমরা ভয়ে কাঁটা হতাম৤ আসলে কাঁটা আমাদের মনে, বাংলা ভাষার পথে কাঁটা বিছানো নেই, আমরাই বরং তার পথে কাঁটা বিছিয়ে কেঁদে কেটে সারা হচ্ছি৤ এখনও অবধি বাংলা বর্ণমালা পাঠের কালে কোথাও কোথাও পড়া হয়, ... ঋ, ঌ, এ ... ইত্যাদি! কিছুতেই যেন আমরা আর এগোতে চাইছি না৤  
       বাংলা যেহেতু সজীব বেগবান স্রোতধারা, তাই তার চলার পথে বানানে নিত্য নতুন সংকট হবে-- হবেই৤ ভাষার স্রোত চলছে বলেই এপাড় ভেঙে ওপার গড়ছে৤ আমরা বরং বর্তমানেরটা সামলাই৤ ভবিষ্যতেরটা তখনকার অবস্থা অনুযায়ী সেসময়ের মানুষেরা সমাধান করবেন৤
       বানান মুখস্ত করতে যে শ্রম, সময়, এবং মেধার অপচয় হয়, তা রহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে৤ একজন খ্যাত ভাষাবিদ তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমরা ছেলেবেলায় বেত আর কানমলা খেয়ে এসব শিখেছি, এরা পারবেনা কেন?’ এই মনোভাবের পরিবর্তন দরকার৤ শ্রম, সময়, আর মেধার আর্থিক মূল্য আছে, শিক্ষার প্রাথমিক-স্তরে ড্রপ-আউটের আশঙ্কা আছে৤ তাছাড়া, আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাতি-নাতনির জন্য কষ্টকর একই জীবন রেখে যাব, নাকি তাদের জন্য সুখ, সুবিধা, আনন্দের আয়োজন করব? এখন তো বেত, আর শাস্তি উঠে গেছে৤
       গতানুগতিকভাবে না ভেবে, একটু সঠিক পথে নতুনভাবে ভাবা যাক৤ তাতে হয়তো সমস্যার জট কেটে যাবে৤ অভাবিত কোন পথও উন্মোচিত হতে পারে৤ বায়ুপোত বা বিমান উদ্ভাবনের কালে বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে বলে দিয়েছিলেন, বাতাসের চেয়ে ভারী জিনিস বাতাসে উড়তে পারে না৤ বরং পেরেছে বলেই তো এখন লক্ষ লক্ষ লোক বিমানে দেশে-বিদেশে যাতায়াত করেন৤
       আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের ধারণা ব্যাকরণ অনুসারে ভাষা চলবে৤ তার গতিপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ব্যাকরণ৤ ব্যাকরণ যা বলবে ভাষা সেভাবে, সে পথে চলবে৤ কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়৤ ব্যাকরণ ভাষাকে ব্যাখ্যা করে, ভাষাকে নির্মাণ করে না৤ ব্যাকরণের কাজ হল যেন ঠিক ধারাভাষ্যকারের, সে ধারাভাষ্য দেবে-- এখন বল অফ স্ট্যাম্পের দিকে, এবার হাঁকড়ালো ছক্কা-- বল গিয়ে পড়েছে গ্যালারির কাছে, আউট আউট-- বল সরাসরি উইকেটে লেগেছে ইত্যাদি৤ এসব এ্যাকশনে ধারাভাষ্যকারের কিছু করার নেই, সে শুধু ধারাভাষ্য দিয়ে যাবে৤ ব্যাকরণের কাজও তাই, ভাষার ভাষ্য দেয়৤ তবে ব্যাকরণের একটা কাজ হল, ভাষার সূক্ষ্ম গতিবিধি ব্যাখ্যা করে বোঝানো৤ যারা সেসব অন্ধিসন্ধি জানে না, তারা শিখে নেয়, কীসে কী হয়৤
       যদি ভাষার উপরে ব্যাকরণের খবরদারি বেশি হয় তবে কী হয়? ভাষাবিদ ডঃ দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু বলেছেন, “পণিনির ব্যাকরণ চিরকালের প্রশংসনীয়-- অপূর্ব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রচিত, অবিশ্বাস্য রকমের হ্রস্ব, অথচ সম্পূর্ণাঙ্গ৤ তাই তিনি গণ্য হলেন “মুনি” বলে-- অভ্রান্ত বলে৤ অতএব তাঁর নিয়মের ব্যতিক্রম, তা যদি উপভাষান্তর হওয়ার জন্য হয় বা কালানুক্রমিক বিবর্তনজাত হয়, তবুও স্বীকৃতির অযোগ্য৤ ফলে এই ব্যাকরণের জন্যই সংস্কৃত ভাষাকে স্থিতাবস্থায় রেখে প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা পরবর্তী স্তরে বিবর্তিত হল”(বাংলাভাষার আধুনিক তত্ত্ব ও ইতিকথা, পৃঃ-২২)৤
       ভাষা তো মানুষ পড়ে পড়ে শেখে না, শেখে শুনে শুনে৤ যার হরফপরিচয় হয়নি-- সে শিশু হোক, বা বয়স্ক হোক, সকলেই ভাষা বলে৤ তার বই পড়ার ক্ষমতা নেই৤ তাকে বই পড়া শিখতে হয়, তাহলে সে কাহিনির রস পায়, ঘটনার মূল্যায়ন করতে পারে৤ ব্যাকরণও ভাষার বিষয়ে মানুষের মনে নানা বোধ জাগ্রত করে যাতে সে ভাষাকে আরও ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে, ভাষার গভীরে প্রবেশ করে ভাষাকে দক্ষভাবে প্রয়োগ করতে পারে, ব্যবহার করতে পারে, যেমন-- সহযোগ, সহযোগী, সহযোগিতা,; দ্বিতীয়, দ্বৈতীয়িক, দ্বিত্ব; ধরন, ধারণ, ধরণা; পরিষ্কার, পুরস্কার, পুরুষকার ইত্যাদি৤ ভাষার সূক্ষ্মবোধ থেকে এসব ব্যাপার হয়, আর ব্যাকরণ তা আমাদের জানায়৤ ব্যাকরণ নিজে কিছু করে না৤ সে কেবল ব্যাখাতা-- কথক৤
       সেই ব্যাকরণ-কথককে ডঃ পবিত্র সরকার যদি মুখের বুলি দেন তবে, আমরা ‘বাংলা’ ব্যাকরণ আরামে কথাভাষ্যে শুনতে পাব৤ তখন আর ব্যাকরণের ভয়ে আমাদের বুক দুরু দুরু করবে না, বরং উপন্যাস পাঠের হৃদ্যতা পাব৤ সে পথের সূচনা তো তিনি করেই রেখেছেন অনেক দিন আগেই “পকেট বাংলা ব্যাকরণ” রচনা করে৤ তাঁর রচিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণকে আমরা আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখি৤
       বাংলায় যুক্তবর্ণ কতগুলি আছে? তার কোনও সঠিক হিসেব, বা তালিকা কোথাও নেই৤ এজন্য মনে করলাম যে, কম্পোজিটরি শিক্ষার বই দেখে হয়তো এটা পাওয়া যাবে৤ সেখানে কিছু অবশ্য পাওয়া গেল, সবটা নয়৤ বাংলায় যেসব দলাপাকানো যুক্তবর্ণ বা মণ্ডহরফ সেসব সেখানে পাওয়া গেল, কিন্তু ছাপায় বাংলা যুক্তবর্ণ গঠন হয় দুই/তিনটি হরফের টুকরো টুকরো অংশ মিলে নানান সংযোগে, তাই তাদের হদিস পাওয়া গেল না৤ সেজন্য তালিকা তৈরি করা শুরু হল৤ আবার এমন কিছু যুক্তবর্ণ তথা মণ্ডবর্ণ কম্পোজিটরি বইয়ে পাওয়া গেল যার ব্যবহার এখন আর নেই৤ সেরকম অচল অন্তত ৭টির হদিস পাওয়া গেছে৤ বিভিন্ন বই, পত্র-পত্রিকা, সংবাদপত্র, অভিধান ইত্যাদি যাবতীয় যা কিছু সকল উৎস থেকে উদাহরণ সংগ্রহ করা শুরু হল, এবং সেকাজ অন্তত চার দশকের বেশি সময় ধরে চলেছে৤ সর্বশেষ যে তালিকা তৈরি হল তাতে বিশুদ্ধ যুক্তবর্ণ অন্তত ৩৯৫টি৤ এ বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করা এবং চৌখুপি/ ছককাটা ঘরে প্লটিং করা হরফের একটি উদাহরণ দেখা যাবে নেটে৤ এই সংগ্রহ পূর্ণাঙ্গ একথা বলা যাবে না, কারণ সর্বশেষ বছর চারেক আগে একটি নতুন যুক্তবর্ণ সংযোজন হয়েছে৤ অর্থাৎ যখন যেটি চোখে পড়েছে সেটি সংগ্রহ করা হয়েছে৤
এর নেটের লিংক:  http://banglamagna.blogspot.in/2010/04/blog-post_30.html

       একটা কৌতূহল মনকে খুবই পীড়িত করত-- বাংলায় এই যে এত দলা পাকানো মণ্ডহরফ এর রূপায়ণ বা ক্রমবিবর্তন কীভাবে হয়েছে? কেন হয়েছে এমন সব গঠন? অনেক অনুসন্ধানেও তার হদিস পাওয়া গেল না৤ পাণ্ডুলিপি পাঠের পুস্তকে তার ক্রমবিবর্তন দেখা গেল না৤ তাহলে?
       বাংলা লিখনের মূল যে বাধার দেওয়াল তার আংশিক অবসান অবশেষে হল৤ বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া তাঁর ‘বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা’ [বাংলা একাডেমী:ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪] গ্রন্থে বলেছেন-- যুক্তবর্ণের মণ্ডরূপ বা মণ্ডগঠন বিষয়ে “নিজের পছন্দ মতো ‘রূপ’(shape) বের করার দিকে সংশ্লিষ্ট লিপিকরদের নজর ছিল”(পৃঃ২৬)। “মিতলেখনের দিক থেকে যুক্তবর্ণগুলি একটু বেশি রকম দরকারি বলেই মনে হতে পারে। কারণ, বাংলালিপির ধারণ ক্ষমতা এ যুক্তবর্ণগুলির বদৌলতে অনেকখানি বেড়ে যায়। ... সংশ্লিষ্ট হরফগুলির ধারক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অধিকাংশ যুক্তবর্ণই বস্তুত আমাদের কাছে অস্পষ্ট হলেও আমরা অবলীলাক্রমে সেগুলির ব্যবহার করি। সাধারণত আমাদের মনে এ নিয়ে কোন বিতর্ক জাগে না, কিংবা জাগলেও আমরা তা নিবৃত্ত করে রাখি। ... পরবর্তী কালে সেগুলিই যে দ্রুতলিখন প্রবণতায় অস্পষ্ট হয়ে গেছে; তা বলা যায়। ... এসব যুক্তবর্ণ আজকে যে অবস্থায় এসে আমাদের হাতে ধরা দিয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে জানতে হলে অথবা সেগুলির অন্তর্নিহিত বর্ণসমূহের অবয়ব সঠিকভাবে শনাক্ত করতে হলে, আমাদের আজকের দিনের বাংলা বর্ণমালার মূল হরফ অবয়বকে মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিলে চলবে না। ... অধুনা প্রচলিত হরফদেহে এগুলির সন্ধান করতে যাওয়া শুধু যে ফলপ্রদ নয়, তা-ই নয়; রীতিমতো ভ্রান্তিজনকও বটে। সেই সঙ্গে এ প্রয়াস রীতিমতো গোঁজামিলের।... প্রচলিত যুক্তবর্ণ সম্পর্কে আরও একটি কথা বিশেষভাবে বিবেচ্য। সে হল:--এগুলি একই যুগে একই সময়ে গঠিত হয়েছিল, এমন নয়; বরং বিভিন্ন যুগে ও বিভিন্ন সময়ে গঠিত হয়েছিল”(পৃঃ১৯৮-৯৯)।
এ বিষয়ে আমার নিজস্ব ভাবনার একটি লিংক:

       বাংলায় যুক্তবর্ণ ৩৯৫টি সংগৃহীত হলেও বাংলায় যুক্তধ্বনি আছে মাত্র ৫৬টি৤ যুক্তধ্বনি বলতে বোঝায় বর্ণের এমন সমাবেশ বা সংগঠন, যা বিশ্লিষ্ট করে উচ্চারণ করা যাবে না৤ বাংলা যুক্তবর্ণগুলি বহু ক্ষেত্রে ইচ্ছে করলে ভেঙে লেখা যায়, বা ভেঙে ভেঙে পড়া যায়, যেমন-- বিস্তর পুস্তক দোস্তকে সস্তায় গস্তায়”, এ ক্ষেত্রে যুক্তবর্ণ ভেঙে লেখা এবং বলা যাবে-- বিস্‌তর পুস্‌তক দোস্‌তকে সস্‌তায় গস্‌তায়৤(সরকার =সর্কার, দরকার=দর্কার, দফতর=দফ্তর, অথবা নির্জন=নিরজন,পার্ক=পারক এসবের কি হবে?) কিন্তু স+্+ত(স্‌+ত) যখন যুক্তধ্বনি হয়,তখন সে ধ্বনি-সমবায় অবিভাজ্য৤ তখন ভেঙে ভেঙে লেখা বা বলা যাবে না, কারণ তখন তা সান্দ্র, সেখানে যুক্তবর্ণের প্রথম ধ্বনিটি হলন্ত হচ্ছে, যেমন-- স্তরে স্তরে স্তম্ভিত মেঘস্তূপ
       বাংলা লেখায় যুক্তবর্ণ বা যুক্তব্যঞ্জন ব্যবহারের শতকরা হার? অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, বাংলায় যুক্তবর্ণ ব্যবহার হল ৮.২২৪%শতাংশ, অর্থাৎ ব্যবহার খুবই বেশি৤ স্বরবর্ণের ই/ঈ, ি/ী ব্যবহার একত্রে মিলিয়ে যা হয়(৮.০৪৩৯%শতাংশ), প্রায় তারই সমপরিমাণ যুক্তবর্ণ ব্যবহারের হার৤ তাই যুক্তবর্ণ লিখন পদ্ধতি যদি সরল, সহজ করা যায়, এবং যদি তা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করা যায়, তবে বাংলাভাষাকে তা নিঃসন্দেহে অমিত স্বস্তি দেবে৤
       বাংলায় বানান নিয়ে যে কূট ব্যবস্থা তাতে “সবিশেষ” শব্দটি বহুরকম করে লেখা যাবে৤ স-৩, ি-২, ব-২, ে-১, শ-৩, ষ-৩ রকম করে লেখা যায়, ফলে এটি মোট ৩×২×২×১×৩×৩=১০৮ রকম লেখা যাবে, অন্তঃস্থ-ব(ৱ) দুরকম ধরে৤ ব্যাপারটা মোটেই সুখকর নয়৤
       বাংলা যুক্তবর্ণের এই তালিকা সংগ্রহের উদ্দেশ্য হল আমি যেভাবে সরল ও স্বচ্ছ করে যুক্তবর্ণ লিখতে চাই, তা আমার করা ইউনিকোড ফন্টে সবটা ছাপা যায় কিনা তা দেখা, নইলে সে পদ্ধতি তো প্রয়োগ করা চলবে না৤ দেখা গেছে ৩৯৫টি যুক্তবর্ণের সবগুলিই সফলভাবে গঠন করা বা ছাপা যাচ্ছে৤ বরং আরও অনেক বেশিই করা যাবে, বা যাচ্ছে৤ এখানে ইউনিকোড ফন্টের কারিগরি দিকটি একটু বলা দরকার৤ আমি যদি (ক+ষ=)ক্ষ, ছাপতে চাই তবে, ফন্টের ভিতরে ‘সম্মিলিত-বর্ণের’ জন্য নির্দিষ্ট একটি অংশে ‘ক্ষ’ আগে থেকে তৈরি করে জমা করে রাখতে হবে, নইলে ‘ক্ষ’ পাওয়া যাবে না৤ আমার ফন্ট কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় গঠিত নয় বলে এই বাধ্যতা সেখানে নেই৤ তাই যাখুশি যুক্তবর্ণ অনায়াসে লেখা যাবে৤ চ+গ, কিংবা ঢ়+প হলেও তা গঠন করা যাবে, যেমন-- চ+গ=চ্গ, ঢ়+প=ঢ়্প ইত্যাদি৤
       ইউনিকোড ব্যবস্থায় সকল স্বরচিহ্নই সাথী বর্ণের পরে টাইপ করতে হয়৤  ইউনিকোড রেন্ডারিং ইঞ্জিনের কারণে, ই-কার(ি), এ-কার(ে ), ও-কার(ো), ঔ-কার(ৌ) ইত্যাদি সব স্বরচিহ্নই হরফের যথাযথস্থানে গিয়ে আপনিই বসে যায়৤
       বাংলায় সর্বাধিক চার বর্ণ মিলিয়ে যুক্তবর্ণ হতে পারে, তার বেশি বর্ণ নিয়ে বাংলায় যুক্তবর্ণ বা যুক্তব্যঞ্জন গঠিত হয় না৤ আমাদের এই বিশেষ প্রকল্পিত পদ্ধতিতে পাঁচটি অবধি বর্ণের  পরস্পর মিলিত গঠন করা যাবে-- স্ত্ব্ন্ম, দ্গ্ভ্ব্ন্৤ অর্থাৎ এই বর্ণসমবায় পদ্ধতিতে পাঁচটি অবধি বর্ণ যুক্ত ক’রে, যুক্তবর্ণ গঠন সম্ভব৤ অন্য ব্যবস্থায় তা করা যায় না৤ এর গঠন এত স্বচ্ছ যে, বাংলা হরফ পরিচয় যার হয়েছে, সে-ই তা পড়তে পারবে৤ দেশি বা বিদেশি যারই বাংলা বর্ণপরিচয় হয়েছে, সে-ই বাংলা সকল যুক্তবর্ণ সহজে পড়তে পারবে৤ আমি যেমন ওডিয়া শিখতে গিয়ে থামতে বাধ্য হয়েছি৤ বাংলার ক্ষেত্রে এখন আর সেটা হবে না৤আমার মূল উদ্দেশ্য তা-ই ছিল৤ সেটা সম্ভব হয়েছে৤
কিছু যুক্তবর্ণ ইচ্ছে করলে তিন রকমভাবেও গঠন করা যাবে--
ক + ষ =ক্‌ষ       ক + ষ=ক্‍ষ         ক + ষ= ক্ষ
জ + ঞ=জ্‌ঞ     জ + ঞ=জ্‍ঞ      জ + ঞ=জ্ঞ
আর দু-রকম করে তো করা যাবে প্রচলিত, অপ্রচলিত সব যুক্ত সমাবেশই-- ম্‌গ/ম্গ, ল্‌দ/ল্দ, ষ্‌ণ/ষ্ণ(ষ৏ ), হ্‌ভ/হ্ভ  ইত্যাদি৤
      
 এই ৩৯৫টি যুক্তবর্ণের দুটি মাত্র মণ্ডহরফ হিসেবে অক্ষত রাখা হয়েছে, সেদুটি হল ক্ষ, জ্ঞ৤ এদুটি বিশ্লিষ্ট করে লিখলে(ক্ষ=ক্‍ষ, জ্ঞ=জ্‍ঞ) তা আর বাঙালির উচ্চারণ থাকবে না৤ তাই ইচ্ছে করেই যথাপূর্ব অক্ষত রাখা হয়েছে৤
       এই ফন্ট কেবল দ্বিতীয় প্রজন্মের করেই ক্ষান্তি দেওয়া হয়নি-- তৃতীয় প্রজন্মের ফন্টও তৈরি করা হয়েছে, এবং চূড়ান্তভাবে চতুর্থ প্রজন্মের ফন্টও তৈরি করা হয়েছে৤ তবে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ফন্ট এখুনি সাধারণ্যে ব্যবহারযোগ্য নয়৤ দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট নিয়েই লোকের মনে অনেক অনেক প্রশ্ন-- এখুনি আরও  এগোলে দাঙ্গা বেঁধে যাবে যে! অগ্রগত মানসিকতার ভবিষ্যতের মানুষের ব্যবহার্য সে ফন্ট তোলা রইল৤ লিংক: http://banglamoy.blogspot.in/2014/09/blog-post_17.html

       বাংলা লিপির গঠনে বৈচিত্র্য খুবই কম৤ একই রূপেরই হেরফের সর্বত্র৤ হরফ গঠনে কিছু বৈচিত্র্য আনার জন্য ফন্টের কয়েকটি নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে, তার কিছু নমুনা দেখা যেতে পারে-- 


       ইংরেজিতে হরফের আলংকারিক রূপ আছে প্রায় হাজার খানেক, বাংলায় কিন্তু একটিও নেই৤ কয়েকটি শব্দ কোথাও কোথাও বিচিত্র করে লেখা হয় বটে তবে তা পুরো বর্ণমালার জন্য গঠিত নয়৤ এটা হয়নি তার কারণ বাংলায় হরফ বেশি৤ ইংরেজিতে ২৬টি হরফ, আর বাংলায় আছে ১১+৩৯=৫০টি, এছাড়াও আছে বিপুল সংখ্যক যুক্তবর্ণের ভার(৩৯৫টি, এর থেকে অন্তত মণ্ডহরফগুলি তো রূপায়িত করতেই হয়)৤ সেগুলির সবটা বিচিত্ররূপে গঠন এক অভাবিত ব্যাপার, ঠিক একারণেই যুক্তবর্ণকে সরল করে লেখার উদ্যোগ, এবং ফলে আলংকারিক ফন্টেও সবকিছু লেখা যাবে, অর্থাৎ তা পুরো বর্ণমালার জন্য গঠিত,  আলাদা আলাদা রূপের ফন্টেও৤
       তবে একটি কথা বলা দরকার৤ আমার নিজস্ব একটি প্রকল্প আছে বাংলা বানান সরল করার৤ সেই প্রকল্পকে সামনে রেখে আলংকারিক ফন্টগুলি তৈরি করা হয়েছে, তাই আপাতভাবে তাতে চলতি বাংলা লেখা যাবে না৤ ভবিষ্যতের দিকে চোখ রেখেই সে কাজ করা হয়েছে, তাই এই মুহূর্তে সেভাবে লিখলে হাস্যকর মনে হবে৤ লোকে বাস্তবে হেসেছেনও




       লেখার এবং  বানানের ব্যাপারটি তো অভ্যাসের ব্যাপার৤ ক+ষ=ক্ষ না লিখে যদি তা রূপে লেখা হয় তো বাধা কী?  এক কালে লেখা হত-- কালেজ, হাঁসপাতাল, গভর্ণমেন্ট৤ এখন আর তা হয়না৤ যদি “বাংলা নতুন-বানান” নিয়ে কারও আদৌ কৌতূহল থাকে তবে দেখতে পারেন৤ লিংক: 
(১)(চারটি অংশ)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-প্রথম অংশ
http://banglamagna.blogspot.in/2013/02/bangla-natun-banan.html

(২)আলয়-- ফন্ট গ্রুপ --ডাউনলোড
https://sites.google.com/site/ahanlipi/home/bangla-natun-banan-font/AALOY-FontGroup2014.zip
      
       আমাদের ভাষা বাংলা-- মাতৃভাষা, স্বদেশভাষা-- স্বভাষা৤ তাকে বিশ্বের সকল ভাষার থেকে এগিয়ে রাখতে আমাদের সকলকে উদ্যোগ নিতে হবে, নতুন করে নতুনভাবে ভাবতে হবে৤ সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলা সবার শীর্ষে থাকবে৤
       এককালে বাংলার বিষয়সম্পদের লোভে অন্তত ৭টি “ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি” গঠিত হয়েছিল, কেবল ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’-ই তৈরি হয়নি৤ এযুগে নাহয় বাংলাভাষার অন্তর-মধু সংগ্রহের জন্য সহস্র জাতি মোহগ্রস্ত হোক৤ আমরা তাঁদের সবাইকে বিশ্বের এই মধুরতম ভাষাটি বিতরণ করব সাগ্রহে, সানন্দে, সম্মানের সঙ্গে৤



--------------------------------------------------------------------------------------------------------

  নোট: লেখাটির মধ্যে অনেকগুলি নেট-লিংক দেওয়া হয়েছে, তার প্রধান কারণ হল, বাংলা চর্চায় যদি পাঠকদের আগ্রহ বাড়ে; তা বিরোধিতা করেই হোক, বা সমর্থন করে হোক, তাতে বাংলা চর্চাই বাড়বে৤ চর্চার মাধ্যমে বাংলা দিনে দিনে উজ্জ্বল হয়ে উঠুক, এটাই লক্ষ্য৤ লেখাটির সবটা আজকের বাংলা ছাপাখানায় সরাসরি ছাপা হয়তো কঠিন৤ অচিরকালের মধ্যে তা করা যাবে আশা করি৤ বাংলা ছাপা এগোক৤




মনোজকুমার দ. গিরিশ
০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ 

দেখুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিংক: Some Important Links

লিংক: http://banglaabas.blogspot.in/ 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন